আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) চূডান্ত তালিকা প্রকাশের পরই পশ্চিমবঙ্গে কোমর বেঁধে নেমেছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বাংলায় এনআরসি তালিকা প্রণয়নে নতুন টিম গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। পশ্চিমবঙ্গে কেন এনআরসি, কী তার সুফল, তা বোঝাতেই নতুন টিম গড়ে প্রচারে নামতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
বিজেপি যে এনআরসির পথ থেকে এক বিন্দু সরছে না, এতেই তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
রোববার আউটলুক ইন্ডিয়া জানায়, রাজ্যে এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিলের সমর্থনে প্রচার শুরু করবে বিজেপি। টিম গঠনে রাজ্য বিজেপির দুই সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ও সায়ন্তন বসুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুজোর আগেই বিজেপি জোর প্রচার শুরু করে দিতে চাইছে।
আসামে এনআরসির পরই রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় জোরগলায় বলেছিলেন, ‘বাংলায়ও এনআরসি হবে। কারণ বাংলা অনুপ্রবেশকারীদের প্রবেশদ্বার। বাংলা দিয়েই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েন অনুপ্রবেশকারীরা।’ পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালুর হুমকি দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশের দিন শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে এক সভায় তিনি বলেন, ‘বাংলায় এনআরসির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। অর্থনৈতিক-সামাজিক সব ক্ষেত্রেই এ রাজ্যকে লুট করছে বিদেশিরাই। সেই বিদেশিদের চিহ্নিত করব। বাংলাদেশি মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই। নাগরিকত্ব বিল পাস করে বাংলাদেশি হিন্দুদের স্বাগত জানানো হবে।’
পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি বাস্তবায়নের আগে সেখানকার নাগরিকদের মাঝে সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে চায় বিজেপি। এনআরসি কী এবং কেন, কী এর উপকারিতা, কী সুফল মিলবে, তা পুস্তিকা আকারে বাড়ি বাড়ি বিলি করবে দলটি।
বাংলার মানুষকে এনআরসির প্রয়োজনীয়তা বোঝাতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেই উদ্যোগের মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিতে চাইছে কারা অনুপ্রবেশকারী আর কারা উদ্বাস্তু। বিজেপির কথায়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে এ দেশে আসা মুসলমানরা অনুপ্রবেশকারী। আর ওই দেশ থেকে আসা হিন্দুসহ অন্য ধর্মাবলম্বীরা শরণার্থী।
প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা ওইসব শরণার্থীর পাশে থাকবে সরকার, তাদের জন্য নাগরিকত্ব বিল আনা হবে। দিলীপ ঘোষের কথায়ই তা স্পষ্ট হয়েছে। শনিবার আসামের চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা থেকে প্রায় ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষের নাম বাদ পড়েছে।
এই নাম বাদ যাওয়া ১৯ লাখ শরণার্থী আবার তাদের নথি জমা দিয়ে তালিকায় নাম তোলার আবেদন জানাতে পারবেন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে। আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি, বাদ পড়াদের মধ্যে ১৪ লাখ বেআইনিভাবে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে এসেছে। তাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়া হবে।
আসামের এনআরসি তালিকা নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বশর্মা দাবি করেছেন, সীমান্তবর্তী জেলার বাসিন্দাদের নথি আবার খতিয়ে দেখা উচিত। তারা নথিতে কারচুপি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বশর্মা। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ১৪ লাখ বেআইনি শরণার্থীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন তিনি। এ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন বিশ্বশর্মা।
তিনি বলেন, ‘ভারত কোন ধর্মশালা নয় যে, এখানে সব ধর্মের নাগরিকদের আশ্রয় দেয়া হবে।’ শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দিল্লি ও তেলেঙ্গানায় এনআরসি চালুর দাবি উঠেছে বিজেপির মধ্যে।
দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তেওয়ারি বলেন, ‘দিল্লিতে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। এখানেও এনআরসি প্রয়োজন।’ একই সুরে কথা বলেছেন তেলেঙ্গানার বিজেপি নেতা রাজা সিং। তিনি বলেন, তেলেঙ্গানায়ও এনআরসি হোক।
হায়দরাবাদের এমআইএম দলের নেতা ও এমপি আসাউদ্দীন ওয়াইসির প্রসঙ্গ টেনে রাজা সিং বলেন, ‘আসাউদ্দীন ভোটব্যাংক বাড়াতে এখন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিচ্ছেন।’
জবাবে আসাউদ্দীন বলেন, অমিত শাহ ব্যাখ্যা দিক- তিনি কীভাবে ৪০ লাখ অনুপ্রবেশকারীর সন্ধান পেয়েছিলেন? এবার কেন কমে ১৯ লাখ হল? তার অভিযোগ, বিজেপি শুধু হিন্দুদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিলে তা হবে সমান অধিকারের লঙ্ঘন।
NEWGin Love to Mention NSL : >
(News Source Link)